
গত রাতে একটি রেস্টুরেন্টের নারী কর্মীর অপ্রত্যাশিত আচরণ আমাকে রীতিমতো হতবাক করেছে!
রেস্টুরেন্ট সেক্টরে ফুড কোয়ালিটি কন্ট্রোলার অফিসার হিসেবে প্রায় দেড় দশক ছিলাম। সেখান থেকে অনেক কিছু শিখেছি, দেখেছি ও দুর্লভ কিছু জানার সৌভাগ্যও হয়েছিল।
একটি কোম্পানিতে নিয়োগ পেলাম,কাজ শুরু করে দিলাম,অর্থ উপার্জন করলাম; অবশ্যই তা নয় কিন্তু। মূলত, সেই কোম্পানি থেকে অর্থ উপার্জন এর পাশাপাশি আরও অনেক কিছু অর্জনের প্রবল আগ্রহ থাকে।
আল-হুমাইজি কুয়েতের বৃহৎ কয়েকটি কোম্পানির মধ্যে অন্যতম একটি কোম্পানি। ওই কোম্পানিতে দায়িত্ব পালন কালে আমাদের হেড অফ ডিপার্টমেন্ট ছিলেন একজন কানাডিয়ান নারী।
একদিন অফিস চলাকালীন ভদ্রমহিলা আমাকে অবজার্ভ করছিলেন।
অর্থাৎ, তিনি দেখছিলেন আমি কাস্টমার কীভাবে কেয়ার করি এবং সাজেস্ট করি।
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর, ওই দিন কাস্টমারকে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিয়ে যে সার্ভিসটি দিয়েছিলাম,সেজন্য কানাডিয়ান নাগরিক ম্যাডাম মোনিকা আমার সকল সহকর্মীদের সামনে আমাকে পুরস্কৃত করেছিলেন। অবশ্যই নগদ কোনো অর্থ দিয়ে নয়,সেটি ছিল একটি প্রশংসা পত্র।
আমার জীবনে কর্মস্থলে এমন ডিপার্টমেন্ট প্রধান আর একজনও দেখিনি।
ওই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে আরেকজন পুরুষ কানাডিয়ান ছিলেন।
একদিন ওই জেন্টলম্যান কাস্টমার সার্ভিস ইস্যুতে একটি উক্তি করেছিলেন যে, “তুমি যখন কাস্টমার সার্ভিসে থাকবে; তখন তোমার নিজস্ব সত্ত্বাকে কাস্টমারের পায়ের নিচে রাখবে” “কাস্টমার ইজ অলওয়েজ রাইট” অর্থাৎ, গ্রাহকরা সবসময় সঠিক।
জীবনে সেদিন জানলাম যে, আসলে এটিই হচ্ছে প্রকৃত ব্যবসায়িক নীতি।
সব ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রে এটাই হওয়া অত্যাবশ্যক বলে মনে করা হয়।
এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে, গত রাতে কুয়েতের অত্যাধুনিক শহর সালমিয়া এলাকায় বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি রেস্টুরেন্টে ছোট পরিসরে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম।
মোটামুটি সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ। হঠাৎ চিৎকার করে একজন মহিলার কথা বলার শব্দ কানে আসে। সহপাঠীদের জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে? একজন সহপাঠী বললেন , খাবার চলাকালীন রেস্টুরেন্টের একজন স্টাফকে চামচ শর্টেজ জানিয়ে সেটি নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। এবং সেসময় বলা হয়েছে যে, এটি সার্ভিস দিলেও সেটি দিলেন না কেন? এটুকুই।
পরে জানা গেলো, সার্ভিস ম্যান তার রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার (আর.এমকে) অভিযোগ করেছে এই বলে যে,কাস্টমার তার সঙ্গে মিস বিহেভ করেছে।
এর পর হয়ে গেলো তুলকালাম কান্ড, কথিত রেস্টুরেন্ট আর.এম মহিলা চিৎকার করে বাংলা-ইংলিশ দুই ভাষা মিলিয়ে যাচ্ছেতাই বলতে থাকলেন।
আমি এবং অন্যান্য সহপাঠী একদম পাশ থেকেই সেসব শুনছিলাম এবং দেখছিলাম।
যদিও এই ইস্যু নিয়ে কথিত মহিলাকে কিছু জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে ছিল,কিন্তু সহপাঠীদের আপত্তি থাকায় নিজেকে এসবে আর জড়াতে যাইনি।
ধরেই নিলাম, আমাদের সহপাঠীরা অর্থাৎ কাস্টমাররা মিসবিহেভ করেছে।
ব্যবসা নীতি কী এটা বলে, অন দ্যা স্পট কাস্টমার এর সঙ্গেও মিসবিহেভ করবেন, ঝগড়াঝাটি করবেন কিংবা চিৎকার করে যাচ্ছেতাই বলবেন?
এবিষয়ে অনেক নীতি বাক্য বলা যেতে পারে। কিন্তু নীতি বাক্য কাকে শোনাবেন?
কাকে আপনি বলবেন যে, ফের যাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেটা কী সম্ভব বা ঠিক হবে?
আমার কাছে কেন যেনো মনে হয়েছে যে, আমরা বাংলাদেশিরা অনেক প্লাটফর্মে অনভিজ্ঞ, অদক্ষ এবং অনুপযুক্ত।
সম্পাদকীয়
আ.হ.জুবেদ (সম্পাদক, অগ্রদৃষ্টি)